রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:০৪ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

শয়তানের কুমন্ত্রণা প্রতিকারে করণীয়

শরিফ আহমাদ:
কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমার (মুমিন) বান্দাদের বলে দাও, তারা যেন এমন কথাই বলে, যা উত্তম। নিশ্চয়ই শয়তান মানুষের মধ্যে ফাসাদ সৃষ্টি করে। নিশ্চয়ই শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু।’ -সুরা বনি ইসরাইল : ৫৩

শয়তান হজরত আদম (আ.)-কে সিজদা করার অস্বীকারের মধ্য দিয়ে শত্রুতা শুরু করেছে। এখনো সে শত্রুতার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। এ জন্য হাদিসে শয়তানের ধোঁকা থেকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা কেউ তোমাদের মুসলিম ভাইয়ের প্রতি কখনো অস্ত্র দ্বারা ইশারা করবে না। কারণ সে জানে না যে, ওই অস্ত্র দ্বারা শয়তান তাকে আঘাত করতে প্ররোচিত করছে এবং এর ফলে সে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে। -মুসনাদে আহমদ : ২/৩১৭

শয়তান মানুষকে বিভিন্নভাবে ধোঁকা দেয়। মানুষের অন্তরে ওয়াসওয়াসা (কুমন্ত্রণা) দিয়ে ইমান আমল ছিনতাই করতে চায়। কোরআন-সুন্নাহ পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ দ্বারা তার চতুর্মুখী আক্রমণ থেকে বাঁচা সম্ভব। এমনই কয়েকটি বিষয় হলো-

ইমানের বিষয়ে কুমন্ত্রণা

শয়তানের প্রথম লক্ষ্য মানুষের ইমান নষ্ট করা। কেননা ইসলামে ইমানের গুরুত্ব সবার আগে। তাই ইমান নিয়ে শয়তান বেশি ওয়াসওয়াসা দেয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, কয়েকজন সাহাবি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে ইমান নিয়ে ওয়াসওয়াসার ব্যাপারে বলেন, অনেক সময় আমাদের মনে এমন সব কথা আসে, যা মুখে উচ্চারণ করার চেয়ে আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া আমার কাছে অধিক পছন্দনীয়। আমরা কী করতে পারি? রাসুল (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের কি এমনটাই মনে হয়? সাহাবিরা বললেন, জি। তখন তিনি জবাব দিলেন, এটা তোমাদের খাঁটি ইমানের লক্ষণ।’ -সহিহ মুসলিম : ১৩২

শয়তান ইমানদারের পেছনে পড়ে থাকে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবীজি (সা.) বলেছেন, তোমাদের কারও কাছে শয়তান আসতে পারে এবং সে বলতে পারে এ বস্তুকে কে সৃষ্টি করেছে? ওই বস্তুকে কে সৃষ্টি করেছে? এরূপ প্রশ্ন করতে করতে শেষ পর্যন্ত বলে বসবে তোমাদের প্রতিপালককে কে সৃষ্টি করেছে? যখন ব্যাপারটি এই স্তরে পৌঁছে যাবে, তখন সে যেন অবশ্যই আল্লাহর কাছে আশ্রয় চায় এবং বিরত হয়ে যায়। -সহিহ বোখারি : ৩২৭৬

ইমান বিষয়ক শয়তানের কুমন্ত্রণা দূর করার সহজ উপায় তিনটি। এক. আউজুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম পড়ে নেওয়া। দুই. আমানতু বিল্লাহ (ইমান বিষয়ক কালেমা) পড়ে নেওয়া। তিন. এ জাতীয় চিন্তা থেকে বিরত হয়ে অন্য কোনো চিন্তা বা কাজে লিপ্ত হওয়া।

পবিত্রতা ইমানের অঙ্গ

হাদিসে এসেছে পবিত্রতা ইমানের অঙ্গ। শয়তান পবিত্রতার ক্ষেত্রে ওয়াসওয়াসা দেয়। নামাজি ব্যক্তিকে অজু করার সময় বিভ্রান্ত করে। পরিপূর্ণ হাত ধৌত করা হয়েছে কি না? মাথা কতটুকু মাসেহ হলো ইত্যাদি বিষয়ে ওয়াসওয়াসা দেয়। এমতাবস্থায় এই দোয়াটি বেশি বেশি পড়া আউজু বিকালিমা-তিল্লাহিত্তাম্মাতি মিন গাদাবিহি ওয়া ইক্কা-বিহি ওয়া শাররি ইবাদিহি, ওয়ামিন হামাজা-তিশশায়া-তিনি ওয়া আই-ইয়াহদুরুন।

হজরত খালেদ বিন ওয়ালিদ (রা.)-কে নবীজি (সা.) এই দোয়া শিখিয়েছিলেন। -মুয়াত্তা মালেক : ১৭৭২

অনেকের বায়ু বের হওয়া নিয়ে ওয়াসওয়াসার সমস্যা রয়েছে। হজরত আব্বাদ ইবনে তামিম (রহ.)-এর চাচা থেকে বর্ণিত হাদিসে তার সমাধান রয়েছে। একদা আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কাছে এক ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হলো যে, তার মনে হয়েছিল যেন নামাজের মধ্যে কিছু হয়ে গিয়েছিল। তিনি বললেন, সে যেন ফিরে না যায়, ততক্ষণ না শব্দ শোনে বা দুর্গন্ধ পায় (পূর্ণ নিশ্চিত হওয়ার আগে নামাজ ছাড়বে না)। -সহিহ বোখারি : ১৩৭

করণীয়

আসলে পৃথিবীতে এমন কোনো মানুষ নেই, যাকে শয়তান কুমন্ত্রণা দেয় না। শয়তানের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য প্রথম করণীয় হলো গোনাহমুক্ত জীবনযাপন এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর শয়তান যদি তোমাকে খোঁচা (কুমন্ত্রণা) দেয় তাহলে তুমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও। নিঃসন্দেহে তিনি স্বয়ং সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। -সুরা হামিম সাজদা :৩৬

হাদিসে শয়তানকে দুর্বল করার আমল শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। হজরত আবু মালিহ একজন (সাহাবি) থেকে বর্ণনা করেন, আমি নবী কারিম (সা.)-এর সঙ্গে একই উটের পিঠে সওয়ার ছিলাম। এমন সময় উটটি লাফালাফি করতে থাকলে আমি বলি, শয়তানের সর্বনাশ হোক! তখন নবী কারিম (সা.) বললেন, তুমি এরূপ বলো না যে, শয়তানের সর্বনাশ হোক! কারণ, তুমি যখন এরূপ বলবে, তখন শয়তান অহংকারে ঘরের মতো ফুলে যায়। আর বলে, আমি খুবই শক্তিমান। বরং তুমি বিসমিল্লাহ বলো। যখন তুমি এরকম বলবে, তখন শয়তান ছোট মাছির মতো (দুর্বল) হয়ে যায়। -সুনানে আবু দাউদ : ৪৯৮২

শয়তানের সমস্ত ওয়াসওয়াসা প্রতিকারের বড় উপায় নিয়মিত নামাজ পড়া ও অন্যান্য আমল করা। আমলের মাধ্যমে ইমানদার বিজয় লাভ করে আর অভিশপ্ত শয়তান হেরে যায়।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION